ত্বকের যত্ন, বিউটি টিপস

ফাঙ্গাল একনে হলে কোন জায়গায় বেশি দেখা দেয়?

ফাঙ্গাল একনে হলে কোন জায়গায় বেশি দেখা দেয়?

ফাঙ্গাল একনে: আসলেই কি একনে, কীভাবে বুঝবেন, কী করবেন

ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে একনে একটি বহুল পরিচিত সমস্যা। কিন্তু সম্প্রতি আরেকটি টার্ম অনেকেই ব্যবহার করছেন—ফাঙ্গাল একনে। অনেকেই এটিকে সাধারণ একনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। আবার কেউ কেউ ফাঙ্গাল একনে থাকলেও একে সাধারণ একনে ভেবে ভুল ট্রিটমেন্ট নেন। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না, বরং ত্বকের অবস্থা খারাপ হয়।

তাহলে ফাঙ্গাল একনে আসলে কী? এটি কীভাবে চিনবেন? কেন হয়? আর সঠিক সমাধান কী? চলুন ধাপে ধাপে জানি।

ফাঙ্গাল একনে আসলে কী?

প্রথমেই পরিষ্কার করা জরুরি—ফাঙ্গাল একনে আসলে একনে নয়।
শুনে অবাক লাগতে পারে, কিন্তু সত্যি এটাই। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pityrosporum folliculitis বা Malassezia folliculitis

  • আমাদের ত্বকে স্বাভাবিকভাবেই কিছু ইস্ট (ফাঙ্গাস) থাকে। এদের মধ্যে Malassezia নামের ইস্ট একটি প্রধান উপাদান।
  • যখন এই ইস্ট স্বাভাবিক সীমার বাইরে অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং ছোট ছোট দানা বা বাম্পস দেখা যায়।
  • এই অবস্থাটিকেই আমরা সাধারণত ফাঙ্গাল একনে বলে থাকি।

তাহলে স্পষ্ট হলো—এটি ত্বকের একটি ফাঙ্গাল সংক্রমণ, সাধারণ একনে নয়।

কেন হয় ফাঙ্গাল একনে?

ফাঙ্গাল একনের মূল কারণ হলো Malassezia ইস্টের অতিরিক্ত বৃদ্ধি। কিন্তু হঠাৎ করে কেন এই বৃদ্ধি ঘটে? কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে তুলে ধরা হলো—

১. অতিরিক্ত তেলযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

অয়েলি খাবার, অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া, বেশি পরিমাণে চিনি ও লবণযুক্ত খাবার খেলে ত্বকের ইস্টের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই ধরনের খাবার ইস্টের জন্য একরকম ‘ফিড’ হিসেবে কাজ করে এবং এর বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয়।

২. গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া

গ্রীষ্মকালে বা আর্দ্র পরিবেশে শরীর বেশি ঘামে। ঘামের কারণে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব তৈরি হয় এবং সেই জায়গায় ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি সহজে হয়। এজন্যই গ্রীষ্মে অনেকেই হঠাৎ ফাঙ্গাল একনে সমস্যায় পড়েন।

৩. টাইট পোশাক ও অপরিচ্ছন্নতা

অতিরিক্ত টাইট পোশাক পরলে ত্বকে বাতাস ঢোকে না, সেই জায়গাগুলো স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। আবার অপরিচ্ছন্ন অভ্যাসও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। ফলে ফাঙ্গাসের বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়।

৪. ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকা

যাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, তারা সহজেই ফাঙ্গাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ফাঙ্গাল একনে দেখতে কেমন?

অনেক সময় এটি সাধারণ একনের মতো দেখতে হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তাই এখানে কিছু স্পষ্ট পার্থক্য দেওয়া হলো—

১. একসাথে অনেকগুলো ছোট বাম্পস:
সাধারণ একনে একেকটা আলাদা আলাদা পিম্পল আকারে বের হয়। কিন্তু ফাঙ্গাল একনে সাধারণত একসাথে অনেকগুলো ছোট ছোট দানা হয়, যেন ক্লাস্টার আকারে।

২. ইচি বা চুলকানি:
সাধারণ একনে সাধারণত এতটা চুলকায় না। কিন্তু ফাঙ্গাল একনে প্রায়ই চুলকায় এবং ইনফ্ল্যামড থাকে।

৩. সবগুলোর সাইজ প্রায় এক:
ফাঙ্গাল একনের সব দানাগুলো সাধারণত সমান সাইজের হয় এবং দেখতে অনেকটাই হোয়াইটহেডসের মতো লাগে।

৪. ফেস ছাড়াও অন্য জায়গায় হয়:
সাধারণ একনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ফাঙ্গাল একনে ঘাড়, গলা, বুক, পিঠ বা শরীরের অন্য অংশেও হতে পারে।

৫. স্কুইজ করলে বের হয় না:
এগুলো দেখতে অনেকটা ক্লগড পোরসের মতো, কিন্তু স্কুইজ করলে কোনো কন্টেন্ট বের হয় না, কারণ এটি ত্বকের গভীরে ইস্টের সংক্রমণ হিসেবে থাকে।

ফাঙ্গাল একনে কীভাবে বুঝবেন?

আপনি যদি নিচের লক্ষণগুলো নিজের ত্বকে লক্ষ্য করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন এটি সাধারণ একনে নয়, বরং ফাঙ্গাল একনে—

  • একই জায়গায় অনেকগুলো ছোট ছোট দানা হয়েছে
  • প্রচণ্ড ইচি করছে
  • নতুন পিম্পল হওয়ার গতি অনেক দ্রুত
  • দানাগুলো একেবারে একই রকম দেখতে
  • পিঠ, ঘাড় বা গলায়ও দেখা যাচ্ছে

এই উপসর্গগুলো থাকলে ধরে নেওয়া যায় যে আপনি ফাঙ্গাল একনে সমস্যায় ভুগছেন।

কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?

ফাঙ্গাল একনে প্রতিরোধের জন্য কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলুন—

১. হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরুন
গরমে কটন বা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে এমন কাপড় বেছে নিন।

২. ত্বক পরিষ্কার রাখুন
প্রতিদিন শাওয়ার নিন। ব্যায়াম বা বাইরে যাওয়ার পর ঘাম হলে দ্রুত ধুয়ে ফেলুন।

৩. ব্যালেন্সড ডায়েট অনুসরণ করুন
অতিরিক্ত তেল, চিনি, লবণ এড়িয়ে চলুন। সবজি, ফল, পানি বেশি করে গ্রহণ করুন।

৪. সঠিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন
অয়েলি বা হেভি ফর্মুলার প্রোডাক্ট কিছুদিনের জন্য বাদ দিন। লাইটওয়েট, ফাঙ্গাল-একনে-সেইফ পণ্য বেছে নিন।

ফাঙ্গাল একনে হলে কী করবেন?

ফাঙ্গাল একনে সাধারণ একনে নয়, তাই সাধারণ একনে ট্রিটমেন্ট কাজ করবে না। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন—

১. স্কিনকেয়ার পরিবর্তন করুন

  • ইস্ট সমৃদ্ধ বা হেভি ময়েশ্চারাইজার এড়িয়ে চলুন।
  • স্কিনকেয়ার যতটা সম্ভব বেসিক রাখুন—জেন্টল ক্লেনজার, হালকা ময়েশ্চারাইজার আর সানস্ক্রিন।
  • ফাঙ্গাল একনে সেইফ ক্লিনজার বা ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করুন।

২. দৈনন্দিন পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন

  • নিয়মিত স্নান করুন এবং গরমকালে বেশি ঘাম হলে দিনে দুইবারও স্নান করতে পারেন।
  • পোশাক অবশ্যই পরিষ্কার ও আরামদায়ক হতে হবে।

৩. কিছু ঘরোয়া টিপস

শাওয়ারের পানিতে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এটি অ্যান্টি-ফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে।

৪. ডায়েট নিয়ন্ত্রণ

খাবার তালিকায় চিনি ও তেল কমিয়ে দিন। পুষ্টিকর খাবার যেমন শাক-সবজি, ফল, প্রোটিন যুক্ত খাবার বেশি খান।

৫. ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন

দুই থেকে চার সপ্তাহ চেষ্টা করার পরও যদি কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান। তিনি সঠিক ওষুধ বা মেডিকেটেড ট্রিটমেন্ট সাজেস্ট করবেন।

অথেনটিক প্রোডাক্ট কোথায় কিনবেন?

ফাঙ্গাল একনে সেইফ স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে হলে অবশ্যই অথেনটিক সোর্স থেকে কিনতে হবে।
আপনি নির্ভর করতে পারেন moreshopbd এবং তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট moreshopbd.com-এ। এখানে বিভিন্ন স্কিন কনসার্নের জন্য উপযোগী অথেনটিক পণ্য পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ ফাঙ্গাল একনে ফ্রেন্ডলি স্কিনকেয়ার রুটিন

সকাল:

১. জেন্টল ফেস ওয়াশ
২. হালকা ময়েশ্চারাইজার (নন-কমেডোজেনিক)
৩. ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন (SPF ৩০+)

রাত:

১. জেন্টল ক্লেনজার
২. প্রয়োজনে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল সিরাম (ডাক্তারের পরামর্শে)
৩. লাইট ময়েশ্চারাইজার

ফাঙ্গাল একনে একটি বিরক্তিকর ত্বকের সমস্যা হলেও এটি কোনো অমীমাংসিত রহস্য নয়। সঠিকভাবে বুঝে পদক্ষেপ নিলে খুব দ্রুতই সমাধান সম্ভব।

  • প্রথমে বোঝার চেষ্টা করুন এটি সত্যিই ফাঙ্গাল একনে কিনা।
  • তারপর সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন ও লাইফস্টাইল অনুসরণ করুন।
  • প্রয়োজন হলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

ত্বকের যত্নে সঠিক প্রোডাক্ট এবং সচেতনতা থাকলে যে কোনো সমস্যার সমাধান সহজ। অথেনটিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কেনার জন্য মনে রাখবেন—moreshopbd বা moreshopbd.com আপনার নির্ভরযোগ্য ঠিকানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *