ত্বকের যত্ন, বিউটি টিপস

AHA ব্যবহারের আগে ত্বকের ধরন জানা কেন জরুরি?

AHA ব্যবহারের আগে ত্বকের ধরন জানা কেন জরুরি?

ত্বকের ধরন অনুযায়ী AHA বা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের সঠিক ফর্ম নির্বাচন করবেন কীভাবে

বর্তমান স্কিনকেয়ার জগতে AHA বা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড এমন একটি নাম যা প্রায় সবারই শোনা। বিশেষ করে যারা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন সম্পর্কে জানেন, তাদের কাছে AHA খুব পরিচিত। তবে এই উপাদানটি নিয়ে অনেকের মনে নানা প্রশ্ন থাকে—
কোন ফর্ম ব্যবহার করবো?
আমার ত্বকের ধরন অনুযায়ী কোন AHA উপযুক্ত?
কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে কি না?

আজকের এই বিশদ আলোচনায় আমরা AHA-এর বিভিন্ন ফর্ম, তাদের বৈশিষ্ট্য, এবং ত্বকের ধরন অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য উপযোগী তা জেনে নেব।

AHA কী?

AHA বা Alpha Hydroxy Acid হলো এক ধরনের কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর। এটি মূলত উদ্ভিদজাত ও প্রাণীজ কিছু প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া যায়। দুধ, আখ, আঙুর, আপেল, লেবু ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত এই উপাদানটি আমাদের ত্বকের উপরের স্তরের মৃত কোষগুলো আলতোভাবে সরিয়ে দেয়।
এর ফলে ত্বক হয় উজ্জ্বল, মসৃণ এবং হেলদি।

AHA সাধারণত ব্যবহৃত হয়—

  • টোনার
  • সিরাম
  • ক্রিম
  • কেমিক্যাল পিল
  • শিটমাস্ক ইত্যাদিতে।

বিশেষ করে কোরিয়ান স্কিনকেয়ার রুটিনে AHA-এর ব্যবহার অনেক বেশি। তবে সঠিক ফর্ম নির্বাচন না করলে বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে এটি ত্বকে জ্বালা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই জেনে নেওয়া জরুরি কোন ফর্ম আপনার জন্য ভালো।

AHA-এর জনপ্রিয় ফর্ম ও তাদের বৈশিষ্ট্য

১. গ্লাইকোলিক অ্যাসিড

AHA পরিবারের সবচেয়ে পরিচিত সদস্য হলো গ্লাইকোলিক অ্যাসিড

  • প্রাকৃতিক উৎস: আখ।
  • বৈশিষ্ট্য: এর মলিকিউল সাইজ সবচেয়ে ছোট, তাই এটি ত্বকের গভীরে সহজে প্রবেশ করতে পারে।
  • উপকারিতা:
    • ত্বকের ডেড সেলস সরিয়ে দেয়।
    • কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়।
    • হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে।
    • গলা, কনুই বা হাঁটুর মতো স্থানে জমে থাকা কালো দাগ ফেইড করতে কার্যকর।

২. ল্যাকটিক অ্যাসিড

একটি মাইল্ড ফর্ম AHA হিসেবে পরিচিত।

  • প্রাকৃতিক উৎস: দুধ, দই, ফার্মেন্টেড সবজি।
  • বৈশিষ্ট্য: জেন্টল এক্সফোলিয়েশন করে এবং স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখে।
  • উপকারিতা:
    • ত্বক উজ্জ্বল করে।
    • ডার্ক স্পট ও রিংকেল কমায়।
    • সেনসিটিভ স্কিনের জন্য বেশ ভালো।

৩. ম্যালিক অ্যাসিড

  • প্রাকৃতিক উৎস: আপেল।
  • বৈশিষ্ট্য: ত্বকে নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
  • উপকারিতা:
    • ত্বক হাইড্রেটেড রাখে।
    • ফাইন লাইন ও রিঙ্কেল কমাতে সহায়তা করে।

৪. সাইট্রিক অ্যাসিড

  • প্রাকৃতিক উৎস: লেবু, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি।
  • বৈশিষ্ট্য: লো কনসেন্ট্রেশনে ব্যবহার উপযোগী।
  • উপকারিতা:
    • ত্বক উজ্জ্বল করে।
    • স্পট রিমুভে সাহায্য করে।
    • রিঙ্কেল কমায়।

৫. ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড

  • প্রাকৃতিক উৎস: বাদামের এক্সট্র্যাক্ট।
  • বৈশিষ্ট্য: বড় মলিকিউল সাইজ, তাই খুব ধীরে ধীরে স্কিনে কাজ করে।
  • উপকারিতা:
    • ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে।
    • সেবাম প্রোডাকশন নিয়ন্ত্রণ করে।
    • একনে কমাতে সাহায্য করে।

৬. টারটারিক অ্যাসিড

  • প্রাকৃতিক উৎস: তেঁতুল, আঙুর।
  • বৈশিষ্ট্য: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
  • উপকারিতা:
    • মেলাজমা বা পিগমেন্টেশনের ক্ষেত্রে উপকারী।
    • স্কিন ব্রাইটেনিং সিরাম ও শিটমাস্কে বেশি ব্যবহার হয়।

ত্বকের ধরন অনুযায়ী AHA বেছে নেওয়ার গাইড

প্রত্যেকের ত্বকের প্রয়োজন আলাদা। সঠিক AHA নির্বাচন করতে নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করুন:

নরমাল স্কিন

যাদের ত্বকে কোনো বড় সমস্যা নেই, তারা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বা ল্যাকটিক অ্যাসিড দিয়ে শুরু করতে পারেন। তবে খুব অল্প বয়সে (২০ বছরের আগে) কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন শুরু করা ঠিক নয়।

ড্রাই স্কিন

শুষ্ক ত্বকের জন্য ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং ম্যালিক অ্যাসিড সবচেয়ে ভালো।
কারণ এগুলো এক্সফোলিয়েশনের পাশাপাশি ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। যদি ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক না হয় তবে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডও ব্যবহার করা যায়, তবে সবসময় কম কনসেন্ট্রেশনের প্রোডাক্ট দিয়ে শুরু করতে হবে।

অয়েলি স্কিন

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সাধারণত BHA বেশি কার্যকর কারণ এটি অয়েল সলিউবল। তবে যদি AHA বেছে নিতে চান, তবে ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারেন। এটি সেবাম কমায় এবং একনে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

একনে প্রন স্কিন

একনে প্রন স্কিনের ক্ষেত্রেও ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড ভালো কাজ করে। তবে একনের জন্য সরাসরি BHA (স্যালিসিলিক অ্যাসিড) প্রায়ই ভালো অপশন। AHA ব্যবহার করতে চাইলে ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড দিয়ে ধীরে ধীরে শুরু করুন।

সেনসিটিভ স্কিন

ল্যাকটিক অ্যাসিড সবচেয়ে মাইল্ড AHA। সেনসিটিভ স্কিনের জন্য এটি তুলনামূলক নিরাপদ। তবুও ব্যবহার শুরুর আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিন।

AHA ব্যবহারের সময় যা মনে রাখতে হবে

১. সানস্ক্রিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক:
AHA ত্বকের উপরের স্তরকে এক্সফোলিয়েট করে, ফলে ত্বক সূর্যের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে যায়। তাই দিনে বাইরে বের হলে SPF 30 বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

২. কম কনসেন্ট্রেশন দিয়ে শুরু করুন:
প্রথমবার ব্যবহার করলে ৫% বা তার নিচে কনসেন্ট্রেশনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ত্বক সাপোর্ট করলে ধীরে ধীরে বাড়াতে পারেন।

৩. একসাথে একাধিক অ্যাকটিভ ব্যবহার করবেন না:
রেটিনল, ভিটামিন সি, অন্য এক্সফোলিয়েটরের সাথে একসাথে AHA ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ত্বক বেশি সেনসিটিভ হয়ে পড়তে পারে।

৪. নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন:
এক্সফোলিয়েশনের পর ত্বক শুষ্ক হতে পারে, তাই ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার জরুরি।

৫. প্যাচ টেস্ট করুন:
যে কোনো নতুন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে হাতে বা কানের নিচে প্যাচ টেস্ট করুন। কোনো জ্বালা, র‍্যাশ বা অ্যালার্জি হলে ব্যবহার বন্ধ করুন।

অথেনটিক প্রোডাক্ট কেনা জরুরি

AHA যুক্ত স্কিনকেয়ার বেছে নেওয়ার সময় নিশ্চিত করুন যে প্রোডাক্টটি অথেনটিক এবং আপনার স্কিন টাইপের জন্য উপযুক্ত। বাজারে অনেক সময় ভেজাল বা নিম্নমানের প্রোডাক্ট মিলে থাকে, যা ত্বকে অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে।
নির্ভরযোগ্য অথেনটিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন
moreshopbd.com বা moreshopbd এর ফিজিক্যাল স্টোর shin’n glow, মিরপুর-২, থেকে।

AHA একটি অসাধারণ স্কিনকেয়ার উপাদান যা ত্বককে উজ্জ্বল, নরম ও স্বাস্থ্যকর করতে সাহায্য করে। তবে সঠিক ফর্ম নির্বাচন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সংক্ষেপে:

  • নরমাল স্কিন – গ্লাইকোলিক বা ল্যাকটিক অ্যাসিড
  • ড্রাই স্কিন – ল্যাকটিক বা ম্যালিক অ্যাসিড
  • অয়েলি স্কিন – ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড
  • একনে প্রন স্কিন – ম্যান্ডেলিক অ্যাসিড
  • সেনসিটিভ স্কিন – ল্যাকটিক অ্যাসিড

AHA ব্যবহার করলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করুন। অথেনটিক প্রোডাক্টের জন্য ভিজিট করুন moreshopbd.com