ত্বকের যত্ন, বিউটি টিপস

ত্বক রক্ষা করতে গিয়ে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হচ্ছে কি?

ত্বক রক্ষা করতে গিয়ে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হচ্ছে কি?

রেগুলার সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয় কি?

আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। অনেকেই ভাবেন, “আমি যদি প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করি, তাহলে কি শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হবে?” কারণ আমরা জানি যে সূর্যের আলো থেকে শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করে। আবার আমরা এটাও জানি যে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV রে) আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর, যা সানবার্ন, অকাল বয়সের ছাপ এবং স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

তাহলে আসলেই কি সানস্ক্রিন ব্যবহারে শরীরে ভিটামিন ডি কমে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের আগে জানতে হবে ভিটামিন ডি কিভাবে তৈরি হয়, সূর্যের রশ্মির কী ভূমিকা, আর সানস্ক্রিন আসলে কিভাবে কাজ করে। চলুন তাহলে ধাপে ধাপে বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

সূর্যের আলো থেকে আমরা কীভাবে ভিটামিন ডি পাই

মানবদেহের ত্বকের মধ্যে কোলেস্টেরলজাত একটি উপাদান রয়েছে, যেটি সূর্যের UVB রশ্মির প্রভাবে ভিটামিন ডি-তে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে কার্যকরভাবে হয় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টার মধ্যে, যাকে “মিড-ডে সান এক্সপোজার” বলা হয়।

অনেকে ভুলভাবে মনে করেন ভোরের সূর্যের আলো থেকেই প্রচুর ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কিন্তু ভোরের দিকে সূর্যের রশ্মির ইনটেনসিটি খুব কম থাকে, অনেক সময় কুয়াশা থাকে, ফলে UVB পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছায় না। তাই কার্যকর ভিটামিন ডি পেতে হলে ঠিক সময়ে সূর্যের আলোতে থাকতে হয়।

কতক্ষণ রোদে থাকলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়

এই সময়ের দৈর্ঘ্য নির্ভর করে আপনার ত্বকের রঙ, যে জায়গায় থাকেন তার আবহাওয়া, সূর্যের কোণ এবং সান রে এর তীব্রতার উপর।

  • ফেয়ার স্কিন: কম সময়ে বেশি ভিটামিন ডি উৎপাদন হয়।
  • ডাস্কি বা শ্যামলা স্কিন: একই পরিমাণ ভিটামিন ডি তৈরি হতে বেশি সময় লাগে।
  • সাধারণভাবে বলা যায়, সপ্তাহে অন্তত ২ দিন, দিনে প্রায় ১০–৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকা ভিটামিন ডি-এর জন্য যথেষ্ট।

সানস্ক্রিন আসলে কীভাবে কাজ করে

সানস্ক্রিনের দুটি ধরন আছে – ফিজিক্যাল (মিনারেল) সানস্ক্রিন এবং কেমিক্যাল সানস্ক্রিন

১. ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন:
এতে থাকে Titanium Dioxide বা Zinc Oxide। এটি ত্বকের উপর একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে, যা UV রশ্মিকে প্রতিফলিত করে বা তাপে রূপান্তর করে দেয়।

২. কেমিক্যাল সানস্ক্রিন:
এটি ত্বকের বাইরের স্তরে শোষিত হয়ে UV রশ্মিকে তাপে রূপান্তর করে। ফলে ক্ষতিকর রশ্মি ত্বকের গভীরে যেতে পারে না।

দুটো ক্ষেত্রেই ত্বককে সানবার্ন, পিগমেন্টেশন এবং এজিং সাইন থেকে সুরক্ষা দেয়।

সানস্ক্রিন ব্যবহারে কি ভিটামিন ডি ব্লক হয়

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণা হয়েছে। আসুন দেখে নিই বিশেষজ্ঞদের মতামত—

  • লন্ডনের কিংস কলেজের প্রফেসর অ্যান্টনি ইয়াং বলেছেন, “সানস্ক্রিন ব্যবহারে সানবার্ন ও স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরির ক্ষেত্রে তা বাধা প্রদান করে না।”
  • ব্রিটিশ জার্নাল অফ ডার্মাটোলজি তে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সানস্ক্রিন ক্ষতিকর UV রশ্মিকে প্রতিরোধ করলেও ভিটামিন ডি-এর প্রাকৃতিক উৎপাদনে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না।
  • American Academy of Dermatology (AAD) বলছে, সানস্ক্রিন ব্যবহারে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হবে না, বরং এটি ত্বককে ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখে।

তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতামত হলো, সানস্ক্রিন UVB রশ্মির একটি অংশকে ব্লক করে দেয়, ফলে খুব সামান্য পরিমাণে ভিটামিন ডি কম তৈরি হতে পারে। তাই তারা সপ্তাহে এক-দু’দিন কিছুক্ষণের জন্য আনপ্রোটেকটেড সান এক্সপোজার সাজেস্ট করেন।

ভিটামিন ডি পেতে শুধু সূর্যের উপর নির্ভরশীল থাকবেন না

শুধু সূর্যের উপর ভরসা করে ভিটামিন ডি পূরণ করার দরকার নেই। কারণ সানবার্ন বা ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে আমাদের নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা প্রয়োজন। ভিটামিন ডি-এর অন্য উৎসও রয়েছে, যেগুলো থেকে আমরা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পেতে পারি—

  • ফিশ লিভার অয়েল
  • সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, টুনা, ম্যাকারেল ইত্যাদি)
  • ডিমের কুসুম
  • চিজ
  • কলিজা
  • মাশরুম
  • ওটমিল

ডায়েটে এগুলো নিয়মিত রাখলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

সানস্ক্রিন ব্যবহারে বয়সের সীমা

অনেকেই প্রশ্ন করেন, ছোট বাচ্চারা কি সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারবে? American Academy of Dermatology (AAD) বলছে, ছয় মাস বয়সের পরে বাচ্চারা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারবে। তবে সেখানে Titanium Dioxide এবং Zinc Oxide আছে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। বর্তমানে শিশুদের জন্য আলাদা সানস্ক্রিন বাজারে পাওয়া যায়।

সানস্ক্রিন ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

১. প্রতিদিন ব্যবহার করুন: শুধু রোদে বের হলেই নয়, ঘরের ভেতরেও UV রশ্মি ঢুকতে পারে। তাই ডে টাইমে প্রতিদিন সানস্ক্রিন লাগান।

২. টু ফিংগার রুল: দুটি আঙ্গুলের সমান পরিমাণ সানস্ক্রিন নিয়ে পুরো মুখে লাগান।

৩. রিঅ্যাপ্লাই: ৩–৪ ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন আবার লাগাতে হবে।

৪. SPF 30 বা তার বেশি বেছে নিন: ব্রড স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন যাতে UVA ও UVB দুটো থেকেই সুরক্ষা পাবেন।

৫. অথেনটিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন: নিম্নমানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে কোনো উপকার হবে না বরং ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। সঠিক এবং অথেনটিক সানস্ক্রিন কিনতে পারেন moreshopbd.com থেকে।

রেগুলার সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হয় না—এটি প্রমাণিত তথ্য। বরং সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে আপনার ত্বক UV রশ্মির ক্ষতির শিকার হতে পারে। সানবার্ন, ত্বকের অকাল বার্ধক্য, এমনকি স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

তবে ভিটামিন ডি-এর জন্য শুধু সূর্যের উপর নির্ভর করবেন না। ডায়েটে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার রাখুন, আর প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। ত্বককে সুরক্ষিত রাখুন অথেনটিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট দিয়ে এবং কিনুন moreshopbd বা moreshopbd.com থেকে।