ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট মানেই নিরাপদ? ত্বকের ক্ষতি করছেন না তো?
রূপচর্চায় ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করে ত্বকের ক্ষতি করছেন না তো?
ত্বকের যত্নে ন্যাচারাল উপাদান ব্যবহার করা আমাদের দেশে অনেক পুরনো অভ্যাস। ছোটবেলা থেকেই শোনা—“লেবু মাখলে ত্বক ফর্সা হয়”, “দারুচিনি পিম্পল সারায়”, “কফি দিয়ে স্ক্রাব করলে ত্বক চকচকে হয়”। এতদিন ধরে প্রচলিত এই ধারণাগুলোকে আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ত্বকে ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু সত্যি কি এই ন্যাচারাল উপাদানগুলো ত্বকের জন্য একেবারে নিরাপদ?
আজকের এই বিশদ আর্টিকেলে জানবেন, কোন কোন ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট আসলে ত্বকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কীভাবে এগুলো ক্ষতি করতে পারে, আর কেন অযথা এক্সপেরিমেন্ট না করে অথেনটিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত।
ন্যাচারাল উপাদান মানেই নিরাপদ নয়
অনেকে মনে করেন, যেহেতু উপাদানটি প্রাকৃতিক, তাই এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু সত্য হলো—প্রতিটি উপাদানেরই একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন থাকে। কিছু উপাদান ত্বকের পিএইচ লেভেল নষ্ট করে দেয়, কিছু আবার ত্বকের প্রাকৃতিক ব্যারিয়ার ধ্বংস করে ত্বককে সংবেদনশীল করে তোলে। ফলাফল হিসেবে দেখা দেয়—
- অ্যালার্জি
- ইরিটেশন
- অতিরিক্ত শুষ্কতা
- পিগমেন্টেশন
- ব্রণ বৃদ্ধি
- স্কিন ব্যারিয়ার ড্যামেজ
কোন কোন ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করা বিপজ্জনক
১. অরেঞ্জ বা লেবুর রস
আমাদের দেশে একটি কমন প্র্যাকটিস—লেবু বা অরেঞ্জের রস সরাসরি মুখে লাগানো। উদ্দেশ্য সানট্যান রিমুভ করা বা ত্বক উজ্জ্বল করা। কিন্তু এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর।
- লেবু ও অরেঞ্জে থাকে উচ্চমাত্রার সাইট্রিক অ্যাসিড।
- এটি ত্বকের পিএইচ লেভেল ইমব্যালেন্স করে।
- ত্বককে অতিরিক্ত সান-সেনসিটিভ করে তোলে।
- রোদে বের হলেই ফটোসেন্সিটিভিটি থেকে পুড়ে যাওয়া বা কালো দাগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কেন এড়িয়ে চলবেন?
কারণ লেবু বা অরেঞ্জ স্কিনের প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তরকে দুর্বল করে দেয়।
২. বেকিং সোডা
ডার্ক স্পট বা ত্বকের দাগ দূর করতে অনেকেই বেকিং সোডা ব্যবহার করেন। আবার কেউ কেউ এক্সফোলিয়েটর হিসেবে ব্যবহার করেন।
- বেকিং সোডার পিএইচ লেভেল ত্বকের তুলনায় অনেক বেশি।
- এটি ত্বকের এসিড ম্যান্টল নষ্ট করে দেয়।
- স্কিন ওভার এক্সফোলিয়েটেড হয়ে যায়।
- ফলাফল—ড্রাইনেস, ইরিটেশন, এমনকি স্কিন পাতলা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত হতে পারে।
কেন এড়িয়ে চলবেন?
ত্বকের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. দারুচিনির গুঁড়া
অনেকে দ্রুত ব্রণ শুকানোর জন্য দারুচিনির গুঁড়া ব্যবহার করেন। কিন্তু এটি একটি মারাত্মক ভুল।
- দারুচিনির গুঁড়া ত্বকে প্রচণ্ড ইরিটেশন সৃষ্টি করে।
- পিম্পলের জায়গায় রেডনেস, ইচিনেস, এমনকি অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে।
- ত্বকে দাগ বা জ্বালাপোড়া তৈরি হওয়ার ঝুঁকিও থেকে যায়।
কেন এড়িয়ে চলবেন?
পিম্পল কমানো তো দূরের কথা, ত্বকের ক্ষতি হওয়াই বেশি সম্ভবনা।
৪. কফি স্ক্রাব
মার্কেটে যখন বিভিন্ন ধরনের মাইল্ড স্ক্রাব পাওয়া যাচ্ছে, তখনও অনেকে কফির দানা ব্যবহার করেন স্ক্রাব হিসেবে।
- কফির দানা অনেক রুক্ষ হয়।
- ফেসের স্কিন বডির অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা ও সেনসিটিভ।
- কফি স্ক্রাব করার ফলে ত্বকে মাইক্রো-টিয়ার সৃষ্টি হয়।
- এতে স্কিন ব্যারিয়ার ড্যামেজ হয়ে ইনফ্লামেশন বা অ্যালার্জি হতে পারে।
কেন এড়িয়ে চলবেন?
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টিয়ারিং ভবিষ্যতে ত্বককে সেনসিটিভ করে তোলে, যা রিঙ্কেলসের আগাম কারণও হতে পারে।
৫. কোকোনাট অয়েল
হেয়ার কেয়ারে কোকোনাট অয়েল অসাধারণ কাজ করলেও ফেসে ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়।
- কোকোনাট অয়েল একটি কমেডোজেনিক উপাদান।
- পোরস ক্লগড করে ফেলে।
- যাদের অয়েলি বা একনে-প্রন স্কিন রয়েছে, তাদের জন্য এটি ভয়াবহ ক্ষতিকর।
- পিম্পল, হোয়াইটহেডস, ব্ল্যাকহেডস বাড়িয়ে দেয়।
কেন এড়িয়ে চলবেন?
ত্বকের উপর একটি ভারী স্তর তৈরি করে যা শ্বাস নিতে দেয় না, ফলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
৬. কাঁচা অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা একটি চমৎকার উপাদান হলেও কাঁচা অ্যালোভেরা সরাসরি ফেসে লাগানো নিরাপদ নয়।
- কাঁচা অ্যালোভেরাতে থাকে ল্যাটেক্স, যা অনেকের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
- সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে এর মধ্যে থাকা ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া ত্বকে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
- অনেকের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি, ইরিটেশন, র্যাশ ইত্যাদি হতে পারে।
স্কিনের যত্নে কী করবেন ?
- নতুন কিছু ব্যবহার করার আগে সবসময় প্যাচ টেস্ট করুন।
- স্কিনের ধরন বুঝে প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
- কোনো ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট সরাসরি ব্যবহার করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- স্কিনের সমস্যা থাকলে ঘরোয়া এক্সপেরিমেন্ট না করে প্রফেশনাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
প্রাকৃতিক উপাদান মানেই ভালো—এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। কিছু উপাদান ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে যখন সঠিক ফর্মুলেশন ছাড়া সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা হয়। তাই ত্বকের যত্নে বিজ্ঞানসম্মত এবং অথেনটিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। এতে আপনার ত্বক যেমন সুরক্ষিত থাকবে, তেমনি উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকরও থাকবে।