ত্বকের যত্ন, বিউটি টিপস

সঠিকভাবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলে স্কিনকেয়ারের সব চেষ্টা বিফল!

সঠিকভাবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলে স্কিনকেয়ারের সব চেষ্টা বিফল!

কমন ময়েশ্চারাইজার মিসটেকস যা স্কিনকেয়ার রুটিনকে করছে অকার্যকর

ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার এমন একটি প্রোডাক্ট যা ব্যবহার না করলে পুরো স্কিনকেয়ার রুটিন যেন অপূর্ণ থেকে যায়। আমরা সবাই চাই আমাদের ত্বক যেন কোমল, নরম, হাইড্রেটেড এবং তারুণ্যদীপ্ত থাকে। কিন্তু বাজারে অসংখ্য ব্র্যান্ড এবং অসংখ্য প্রোডাক্টের ভিড়ে অনেকেই জানেন না কোন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত, বা কিভাবে ব্যবহার করলে তা সত্যিকারের উপকার করবে।
অften দেখা যায়, আপনি দামি এবং স্কিন টাইপ অনুযায়ী সঠিক ময়েশ্চারাইজার কিনলেন, অথচ ব্যবহার করার পরও মনে হচ্ছে কোনো লাভ হচ্ছে না। কেন এমন হচ্ছে?
এর প্রধান কারণ হলো কিছু সাধারণ ভুল, যেগুলো আমরা অজান্তেই করি।

চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেই—

ময়েশ্চারাইজার আসলে কী এবং কেন দরকার ?

ময়েশ্চারাইজার হলো এমন এক ধরনের স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যা ত্বকের উপরের স্তরে আর্দ্রতা ধরে রাখে, হাইড্রেশন লক করে এবং বাইরের ধুলোবালি ও ক্ষতিকর পদার্থ থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

ময়েশ্চারাইজারের প্রধান উপাদানগুলো সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত:

  • হিউমেকট্যান্ট: ত্বকের ভেতর থেকে আর্দ্রতা টেনে আনে এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে।
  • ইমোলিয়েন্ট: ত্বককে মসৃণ ও কোমল করে, টেক্সচার উন্নত করে।
  • অক্লুসিভ: ত্বকের উপরে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে যা আর্দ্রতা বাইরে চলে যেতে দেয় না।

এছাড়া অনেক ময়েশ্চারাইজারে প্ল্যান্ট বেইজড তেল, এসেনশিয়াল অয়েল বা ভিটামিন যুক্ত থাকে, যা ত্বকের জন্য অতিরিক্ত পুষ্টি যোগায়।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপাদান এবং ঘনত্ব বদলে যায়—

  • ড্রাই স্কিনের জন্য বেশি অক্লুসিভ ও ইমোলিয়েন্টযুক্ত ময়েশ্চারাইজার দরকার।
  • অয়েলি বা কম্বিনেশন স্কিনের জন্য লাইটওয়েট, জেল বেসড ময়েশ্চারাইজার ভালো।

ভুলগুলো কোথায় হয় – কমন ময়েশ্চারাইজার মিসটেকস

১. অপরিষ্কার ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা

ময়েশ্চারাইজার দেওয়ার আগে যদি ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার না করা হয়, তবে ধুলোবালি ও ময়লা ত্বকের উপরেই থেকে যায়। এই অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করলে তা পোরসের ভেতর ঢুকে সেগুলোকে ব্লক করে দেয়।
ফলাফল – ব্রণ, হোয়াইটহেড, ব্ল্যাকহেড কিংবা র‍্যাশ।
সমাধান:
সবার আগে একটি মাইল্ড ক্লেনজার দিয়ে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। তারপর টোনার বা ফেস মিস্ট ব্যবহার করে হালকা ড্যাম্প করে নিন। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগান।

২. হাত পরিষ্কার না করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা

আমরা অনেক সময় হাত না ধুয়েই মুখে ক্রিম বা লোশন লাগাই। অথচ বাইরে থেকে আসার পর আমাদের হাতেই থাকে সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া ও ময়লা। সেই হাত দিয়ে ময়েশ্চারাইজার নিলে, ব্যাকটেরিয়াগুলো সরাসরি ত্বকে চলে আসে।
ফলাফল – ইনফেকশন, একনে, রেডনেস।
সমাধান:
যেকোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

৩. শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা

অনেকে মুখ ধুয়ে একদম শুকিয়ে যাওয়ার পর ময়েশ্চারাইজার লাগান। কিন্তু ত্বক সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে ময়েশ্চারাইজার ভালোভাবে পেনিট্রেট করতে পারে না।
বেস্ট টাইম: মুখ ধোয়ার পর টাওয়েল দিয়ে মুছে নিন, তবে ত্বকে হালকা ভেজাভাব রাখুন। সেই অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার লাগান।
এতে ত্বকের ভেতরের আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হয়।

৪. তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করা

একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো—তৈলাক্ত স্কিনে ময়েশ্চারাইজার দরকার নেই। বাস্তবে এটি খুবই ভুল।
অয়েলি স্কিনেও ডিহাইড্রেশন হতে পারে। ত্বকের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা না পেলে ত্বক উল্টো অতিরিক্ত তেল উৎপাদন শুরু করে। ফলে স্কিন আরও বেশি তেলতেলে হয়ে যায়।
সমাধান:
অয়েলি স্কিনের জন্য লাইটওয়েট, নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। এগুলো পোরস ক্লগ করবে না এবং ত্বককে ব্যালান্স করবে।

৫. প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা

অতিরিক্ত ব্যবহার: শুষ্কতা কমানোর জন্য অনেকেই অতিরিক্ত পরিমাণে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ফেলেন। এতে ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে যায় এবং পোরস ব্লক হয়ে যায়।
খুব কম ব্যবহার: আবার খুব কম লাগালে ত্বক পর্যাপ্ত হাইড্রেশন পায় না।
সমাধান:
প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ ব্যবহার করুন। কপাল, গাল, নাক ও চিবুকে অল্প করে নিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন।

৬. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের সময় ত্বক খুব জোরে ঘষাঘষি করা

মুখের ত্বক শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি সেনসিটিভ। খুব জোরে ঘষাঘষি করলে এপিডার্মিস লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফলাফল – ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া, রিঙ্কেল, ফাইন লাইনস।
সমাধান:
ময়েশ্চারাইজার হালকা হাতে, আলতো ম্যাসাজের মাধ্যমে প্রয়োগ করুন।

৭. নেক এরিয়ায় ময়েশ্চারাইজার না লাগানো

আমরা প্রায়শই মুখের যত্নে যত্নবান হলেও গলার ত্বক ভুলে যাই। অথচ গলার ত্বকও সমান পাতলা ও সেনসিটিভ।
সমাধান:
মুখে যেভাবে ময়েশ্চারাইজার লাগান, একইভাবে নেক এরিয়ায়ও লাগান।

অথেনটিক প্রোডাক্ট ব্যবহার কেন জরুরি

ময়েশ্চারাইজার বা যে কোনো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে নিশ্চিত করুন এটি অথেনটিক এবং আপনার স্কিন টাইপের জন্য উপযোগী। বাজারে নকল বা নিম্নমানের প্রোডাক্টে ভরপুর, যেগুলো ত্বকে ভালো করার বদলে ক্ষতি করে।

অথেনটিক মেকআপ, স্কিনকেয়ার ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পারেন
moreshopbd.com বা moreshopbd এর যেকোনো অথোরাইজড শপ থেকে।

সঠিকভাবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে উপকারিতা

  • ত্বক নরম ও কোমল থাকে
  • হাইড্রেশন ঠিক থাকে
  • স্কিন ব্যারিয়ার মজবুত হয়
  • পিগমেন্টেশন কমে যায়
  • সূক্ষ্ম রেখা ও শুষ্কভাব কমে যায়

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি না জানলে বা সাধারণ ভুল করলে আপনার পুরো স্কিনকেয়ার রুটিন অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
তাই যা করতে হবে:

  • প্রতিবার ব্যবহারের আগে ত্বক পরিষ্কার করুন।
  • হাত ধুয়ে নিন।
  • হালকা ভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
  • অয়েলি স্কিন হলেও ময়েশ্চারাইজার স্কিপ করবেন না।
  • সঠিক পরিমাণ ব্যবহার করুন।
  • হালকা হাতে প্রয়োগ করুন।
  • নেক এরিয়া বাদ দেবেন না।
  • সবসময় অথেনটিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।

এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মেনে চললেই আপনার ময়েশ্চারাইজার ত্বকে তার সর্বোচ্চ কার্যকারিতা দেখাবে এবং আপনার স্কিনকেয়ার রুটিনকে করে তুলবে সত্যিকারের কার্যকর।